গত তিন বছর ধরে নদী খনন কাজ চলমান থাকায় নিচু এলাকার জলাশয়গুলোতে আমন ও বোরো আবাদ হয়নি। এছাড়া সম্প্রতি ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে খড় ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে খড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ৫০০ টাকায়ও মিলছে না এক পন খড়। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে খামারি ও চাষিরা লোকসান এড়াতে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বোরো ধান ঘরে তোলার সময় ঝড় ও অবিরাম বৃষ্টির সাথে শ্রমিক সংকটে চাষিরা সময় মতো ঘরে ধান তুলতে পারেনি। ক্ষেতেই ভিজে খড় নষ্ট হয়েছে। ফলে মানুষের প্রধান খাবারের যোগান মিটলেও গবাদি পশুর খাবার খড়ের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় খামারের মাধ্যমে কিছু মানুষ গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকে। এর বাইরে প্রতিটি পরিবার অন্তত একটি করে গরু মোটাতাজাকরণ করে পরিবারে সচ্ছলতার যোগান দেয়। অধিকাংশ চাষির গরুর খড়ের যোগান মেটাতে বাড়ির আঙিনায় ১-২ কাঠা জমিতে উন্নতজাতের ঘাসের প্লট রয়েছে। এতে মধ্যবিত্তরা গরু কিনে ৩-৪ মাস পালনের পর বেচে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চালাতো। কিন্তু বর্তমান গবাদিপশুর প্রধান খাবার খড়ের তীব্র সংকটসহ অন্যান্য সুষম খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে।
ভোগতী গ্রামের খামারি বাবু বলেন, খড়ের অভাবে গবাদিপশু পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। বেশি দাম দিয়ে কোনোরকম খড় কিনে আনলেও গরুর পেট ভরছে না, গরু শুকিয়ে যাচ্ছে। গরুর শুকনো বা সুষম খাবারের দামও বেড়ে গেছে। ধানের কুঁড়ো, গমের ভূষি, সরিষার খৈলের দামও রেড়েছে অস্বাভাবিক।
মাসখানেক আগে খড়ের পোন ছিল ২৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান না ওঠা পর্যন্ত খড়ের দাম আর কমবে না বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, ধানের কুঁড়োর বস্তা (৫০ কেজি) ছিল ৪৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, এক হাজার ৫০০ টাকার গমের ভূষি (৫০ কেজি) এখন এক হাজার ৬০০ টাকা, সরিষার খৈল বস্তায় বেড়েছে ২০০ টাকা। এ অবস্থায় খামারি ও চাষিরা খড়ের অভাবে কম দামে গরু বেচে দিচ্ছেন।
এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘ করোনাকাল অতিক্রম করায় তাদের হাতে গচ্ছিত কোনো টাকা নেই। যার কারণে কম দামেও গরু কেনার সামর্থ্য নেই। এক মাস আগে দেশি যে গরুর দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, ‘এ উপজেলায় ১৯২টি গরুর খামার রয়েছে। গরু রয়েছে ৯০ হাজার। এতে প্রতিদিন ১৮০ মেট্রিক টন খড় লাগে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। এছাড়া কেশবপুরে ২০০ একর জমিতে নেপিয়ার পাকচং ঘাস চাষ করা হয়েছে যা থেকে ৬৫ হাজার কেজি ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন প্রয়োজন ৯ লাখ কেজি ঘাস। লাগানো ঘাস দিয়ে চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ইতোমধ্যে এক হাজার ২০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’